সদাকাতুল ফিতরা সংক্রান্ত মাসায়েল
১. ফিতরার অর্থ কি?
২. কোন লোকের প্রতি ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব?
৩. ফিতরা কি টাকা দিয়ে আদায় হবে?
২. কোন লোকের প্রতি ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব?
৩. ফিতরা কি টাকা দিয়ে আদায় হবে?
উত্তর -১
সদাকাতুল ফিতরা বা ফেতরাশাব্দিক অর্থ খুঁজলে আমরা দুটি শব্দ সাদাকা ও ফিতরা পাই যেখানে সাদাকাহ অর্থ হলো দান এবং ফিতর শব্দের অর্থ হলো ভঙ্গ করা বা ভাঙ্গা। শাব্দিক অর্থে আমরা দেখতে পাই ভঙ্গের জন্য কোনো দান যাকে সাদাকাতুল ফেতরা ফিতর বলা যায়।
সদাকাতুল ফিতরা বা ফেতরাশাব্দিক অর্থ খুঁজলে আমরা দুটি শব্দ সাদাকা ও ফিতরা পাই যেখানে সাদাকাহ অর্থ হলো দান এবং ফিতর শব্দের অর্থ হলো ভঙ্গ করা বা ভাঙ্গা। শাব্দিক অর্থে আমরা দেখতে পাই ভঙ্গের জন্য কোনো দান যাকে সাদাকাতুল ফেতরা ফিতর বলা যায়।
ইসলামের পরিভাষায় ইসলামের ফরজ ইবাদত সিয়াম পালনের সময় ভুলবশতঃ কোনো ভূল-ভ্রান্তি হলে বা কোনো আমল ছুটে গেলে কিংবা কোনো কারণে রোজা ভঙ্গ হলে (যা আমাদের অজানা থাকে) তার কাফ্ফারা স্বরূপ যে দান বা সদকা করা হয়ে থাকে তাকে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা বলা হয়ে থাকে।
উওর -২
রমজানের সিয়াম পালনে যেহেতু ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে তাই এটি সামর্থবান সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য আদায় করা ওয়াজিব। এখানে ধনী, ছােট, বড়, স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপর ওয়াজিব বলা হয়েছে। অর্থাৎ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত জন্ম নেওয়া কোনো বাচ্চার জন্যও এটি আদায় করতে হবে। যারা যাকাত গ্রহণের শর্ত পূরণ করে এমন ব্যক্তি সদাকাতুল ফিতরও গ্রহণ করতে পারে।
রমজানের সিয়াম পালনে যেহেতু ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে তাই এটি সামর্থবান সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য আদায় করা ওয়াজিব। এখানে ধনী, ছােট, বড়, স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপর ওয়াজিব বলা হয়েছে। অর্থাৎ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত জন্ম নেওয়া কোনো বাচ্চার জন্যও এটি আদায় করতে হবে। যারা যাকাত গ্রহণের শর্ত পূরণ করে এমন ব্যক্তি সদাকাতুল ফিতরও গ্রহণ করতে পারে।
নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে মুসলমান নারী-পুরুষের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়।
উওর-৩
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় ২০২২ সালের ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৩১০, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধরন করে। কমিটি দেশের বিভিন্ন বড় বড় জেলা শহর ও বিভাগ হতে গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের বাজার মূল্য সংগ্রহ করতঃ তার উপর ভিত্তি করে ফিতরা ২০২২ নির্ধারণ করেছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ইসলামী শরিয়াহ মতে সামর্থ্য অনুযায়ী আটা, খেজুর, গম, কিশমিশ, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় ২০২২ সালের ফিতরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৩১০, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধরন করে। কমিটি দেশের বিভিন্ন বড় বড় জেলা শহর ও বিভাগ হতে গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের বাজার মূল্য সংগ্রহ করতঃ তার উপর ভিত্তি করে ফিতরা ২০২২ নির্ধারণ করেছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ইসলামী শরিয়াহ মতে সামর্থ্য অনুযায়ী আটা, খেজুর, গম, কিশমিশ, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়।
এক সা পরিমাণ কত কেজি
হাদিসের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই ফেতরা আদয়ে বেশ কিছু খাদ্য দ্রব্যের বর্ণনা রয়েছে। যেমন- গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি। একই সাথে পণ্যের পরিমাণেও তারতম্য দেখা যায়। যেমন খেজুর, দিতে হবে এক সা’ আবার গম, যব, পনির কিংবা কিসমিসের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে দু্ই সা’।
হাদিসের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই ফেতরা আদয়ে বেশ কিছু খাদ্য দ্রব্যের বর্ণনা রয়েছে। যেমন- গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি। একই সাথে পণ্যের পরিমাণেও তারতম্য দেখা যায়। যেমন খেজুর, দিতে হবে এক সা’ আবার গম, যব, পনির কিংবা কিসমিসের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে দু্ই সা’।
এক সা বলতে তৎকালীন সময়ে আরবে পরিমাপের একককে বুঝানো হয়েছে যা বর্তমান পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রতি সা হলো এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। অন্যদিকে দুই সা হলো তিন কেজি ৩৩০ গ্রাম।
ফিতরা পন্যের সমপরিমাণ মূল্য নগদ অর্থ দ্বারা পরিশোধ করা য়ায়।।
ফিতরা কি এবং কেন আদায় করতে হয়?
ইসলামি অনুশাসনের এক অনন্য নির্দশন ফিতরা। সাদকাতুল ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে বিধিবদ্ধ হয়। এটি অসহায় গরিব দুঃখীর ন্যয্য পাওনা। রমজান, ফিতরা ও ঈদ এক সূত্রে গাঁথা। ফিতরার মধ্যেই আছে গরিব প্রতিবেশির আনন্দ ও ঈদ উৎসব। রমজান মাসে ঈদের আগে ফিতরা আদায় করা উত্তম।
ইসলামি অনুশাসনের এক অনন্য নির্দশন ফিতরা। সাদকাতুল ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে বিধিবদ্ধ হয়। এটি অসহায় গরিব দুঃখীর ন্যয্য পাওনা। রমজান, ফিতরা ও ঈদ এক সূত্রে গাঁথা। ফিতরার মধ্যেই আছে গরিব প্রতিবেশির আনন্দ ও ঈদ উৎসব। রমজান মাসে ঈদের আগে ফিতরা আদায় করা উত্তম।
এ ফিতরা কি? কেন তা দিতে হয়?
ফিতরা বা সাদকাতুল ফিতর হলো সেই নির্ধারিত সাদকা, যা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের দিতে হয়। এটিকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। ঈদের দিন সকালেও যদি করো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ- সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্য থাকে তবে তাকে তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।
ফিতরা বা সাদকাতুল ফিতর হলো সেই নির্ধারিত সাদকা, যা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের দিতে হয়। এটিকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। ঈদের দিন সকালেও যদি করো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ- সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্য থাকে তবে তাকে তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।
‘ফিতর’ মানে হলো ‘রোজা ছাড়া’। অর্থাৎ যা রমজানের রোজা ছাড়ার কারণে আদায় করতে হয়। ফিতরা মানে হলো প্রকৃতি। যেহেতু ফিতরার মাধ্যমে মানুষ তার পালণীয় রোজার যাবতীয় খতগুলো; ভুলগুলো থেকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মার আমলকে নির্মল করার জন্য অসহায়দের মাঝে দেয়া আবশ্যক, তাই এর নাম ফিতরা।
অসহায় প্রতিবেশি ও স্বজনদের জন্য ফিতরা, দান-অনুদান ও উপহার সামগ্রী প্রদান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ারও অন্যতম মাধ্যম। রোজা পালনে কোনোভাবে যদি রোজার আংশিক ক্ষতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়; তার সমাধান ও মুক্তির মাধ্যম হচ্ছে- অসচ্ছল, অসহায় ব্যক্তিদের মাঝে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করা। যা আমাদের জন্য একান্ত আবশ্যকীয়।
ফিতরা আদায়ের উপকারিতাঃ
> এই সাদাকাহ হবে রোজার ভুল-ত্রুটির ঘাটতির ক্ষতির পরিপূরক। কেননা সাওয়াবের কাজ-কর্ম মানুষের পাপ তথা গোনাহকে ধ্বংস করে দেয়।
> এ সাদকাহকে আবশ্যক করার আরেকটি কারণ হচ্ছে- ঈদের দিন গরিব ও মিসকিনদের আনন্দ-বিনোদন, উত্তম পোশাক ও খাবারের সহজলভ্যতার জন্য। যাতে তারাও ধনীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এ জন্যই সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী, উম্মতের দরদী নবি হজরত মুহাম্মাদুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সুব্যবস্থার প্রচলন করে গেছেন। হাদিসে এসেছে-
- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার জন্য এক সা’ (প্রায় সাড়ে ৩ কেজি) খেজুর বা যব খাদ্য (আদায়) ফরজ করেছেন। (বুখারি, মুসলিম)
- হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় এর জমানায় আমরা সাদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারি)
- তিনি আরও বলেন, আমরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু। যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বুখারি)
> আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দীর্ঘ একটি বছর মুমিন মুসলমানকে সুস্থ্য ও নিরাপদ রাখার পর বরকতময় মাস রমজান দান করেছেন। তাই এ সুস্থ্য দেহের জাকাত হল ফিতরা।
> এই সাদকাহ আদায় করতে হয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য। কেননা আল্লাহ মেহেরবানী করে তার বান্দাদের দীর্ঘ এক মাস মহামূল্যবান ফরজ ইবাদত রোজা রাখার তাওফিক দান করেছেন।
সর্বোপরি এই নিয়ামতের মাস, আনুগত্যের মাসের শেষে যাতে আত্মশুদ্ধি প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ হয়। সব হ্যাঁ-সূচক ও না-সূচক আনুগত্যের পর আত্মাকে বিশুদ্ধ ও পবিত্র করার লক্ষ্যে আল্লাহর পথে মাল (অর্থ) খরচের মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র করার জন্যই ফিতরার ব্যবস্থা করেছেন।
- হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা।
- হজরত ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলইহির মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম।’
- হজরত ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলইহির মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা শ্রেয়। অন্য সব ইমামের মতও অনুরূপ।’
- হজরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলইহির মতে, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনের অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম।’
- এ ছাড়া সাদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহর সর্বসম্মত ঘোষণা হলো- ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী তাই আদায় করা।’ (আল মুগনি, আওজাজুল মাসালিক)
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে এ ফিতরা আদায় করে দিতে হবে। আর তা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই আদায় করা সর্বোত্তম।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজনের রোজায় ফিতরা আদায় করে গরিবের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে ভূমিকা রাখা। তাদের মুখে হাসি ফোটানো। তাদের আনন্দ ও উৎসবে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজনের রোজায় ফিতরা আদায় করে গরিবের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে ভূমিকা রাখা। তাদের মুখে হাসি ফোটানো। তাদের আনন্দ ও উৎসবে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা রাখার এ সময় থেকেই সাধ্যমতো ফিতরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। ফিতরা আদায় করার মাধ্যমে রোজার ভুলগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Comment